সাত আসমান বলতে আসলে কি বোঝানো হয়েছে
কোরআনের সূরা মুলকের তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলা সাত আসমানের সৃষ্টি বর্ণনা করেছেন, যা স্তরে স্তরে বিন্যস্ত। এই সাত আসমানের প্রকৃতি, অবস্থান, সীমা ও গঠন নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞান এখনও নিশ্চিত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
কোরআনে ‘সামাওয়াত’ শব্দটি বহুবচন আকাশ বোঝায়, যেখানে সাতটি আকাশ বা স্তর থাকার কথা বলা হয়েছে। মুসলমানরা এ তথ্যকে আল্লাহর কালাম হিসেবে গ্রহণ করলেও, বাস্তব জগতে সাত আসমানের অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক আছে।
নাস্তিকরা এটিকে কল্পনা বলে, কেউ কেউ শুধু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের স্তর হিসেবেই দেখে। তবে সূরা ফুসসিলাতের ১২ নম্বর আয়াত থেকে বোঝা যায় প্রথম আসমানটি পৃথিবীর নিকটবর্তী মহাশূন্য, যেখানে কোটি কোটি গ্রহ, নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সি অবস্থিত।
অতএব, এটি বায়ুমণ্ডল নয়, বরং তার উপরে অবস্থিত প্রথম স্তর। হাদিস অনুযায়ী, প্রতিটি আসমানের দূরত্ব পৃথিবী থেকে প্রায় ৫০০ বছরের পথ, কিন্তু এই দূরত্বের প্রকৃতি ও মাপকাঠি স্পষ্ট নয়।
বর্তমানের বৈজ্ঞানিক ধারণা মহাবিশ্বের অজস্র গ্যালাক্সি ও তারকা নিয়ে বিস্তৃত হলেও, এটি সাত আসমানের স্তরের বিরোধী নয় কারণ স্তর বলতে বস্তুসংখ্যার নয়, গঠনগত বিভাজন বোঝানো হয়। তুর্কি মহাকাশ বিজ্ঞানী ড. হালুক নূর মহাকাশকে সাতটি স্তরে ভাগ করেছেন, তবে এ স্তরগুলো কোরআনের সাত আসমান কিনা তা নিশ্চিত নয়।
মুসলিম দার্শনিক ইমাম গাজালী সাত আসমানের নাম ও গঠন নিয়ে মতামত দিয়েছেন, যা আলোকিত মুক্তা, লাল ইয়াকুত ইত্যাদি দিয়ে নির্মিত বিভিন্ন স্তর নির্দেশ করে।
মহাকাশ বিজ্ঞান বর্তমানে অনেক অজানা রহস্যের মধ্যে রয়েছে, এবং কোরআনের তথ্য অনেক ক্ষেত্রেই বৈজ্ঞানিকভাবে পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে।
তাই আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী মহাকাশের দিকে বারবার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখো, তবুও মানুষের দৃষ্টি ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসবে। অর্থাৎ, মানুষের বর্তমান জ্ঞান সীমিত। এই কারণে, সাত আসমানের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যুক্তিযুক্ত নয়।
🔭 আধুনিক বিজ্ঞান এখনও সাত আসমানের অস্তিত্বের পক্ষে নিশ্চিত প্রমাণ দিতে পারেনি।
🌍 প্রথম আসমানটি পৃথিবীর নিকটবর্তী মহাশূন্য যেখানে অসংখ্য গ্রহ, নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি আছে।
🛡️ কোরআনে প্রথম আসমানকে প্রদীপমালা দ্বারা সজ্জিত ও সুরক্ষিত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
🚀 হাদিস অনুযায়ী, প্রত্যেক আসমানের দূরত্ব প্রায় ৫০০ বছরের পথ, তবে মাপকাঠি ও মাধ্যম অজানা।
🌠 বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের বিভিন্ন মতামত ও গবেষণায় মহাকাশকে সাত স্তরে ভাগ করার চেষ্টা।
📜 কোরআনের তথ্যগুলো অনেক ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং রহস্যময় মহাবিশ্বের সীমাবদ্ধতাকে তুলে ধরে।
🔍 আসমানের প্রকৃতি ও সীমা অনির্ধারিত: কোরআনে ‘সামাওয়াত’ শব্দের অর্থ ‘আকাশসমূহ’, যা একাধিক স্তরের আকাশকে নির্দেশ করে। প্রথম স্তরটি পৃথিবীর নিকটবর্তী মহাশূন্য, কিন্তু বাকি ছয় স্তর কোথায় এবং কী ধরনের তার স্পষ্ট কোন বর্ণনা নেই। ফলে, মানুষের পর্যবেক্ষণ ও প্রযুক্তি এ স্তরগুলোর প্রকৃতির ব্যাখ্যা দিতে পারছে না।
🌠 বিজ্ঞান ও ধর্মের সংমিশ্রণ: আধুনিক মহাকাশবিদ্যা যেমন গ্যালাক্সি, সুপারক্লাস্টার, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছে, তেমনি কোরআনে সাত আসমানের বর্ণনা ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। উভয়ের মধ্যে সংঘাত নয়, বরং বিজ্ঞান এখনো অনেক তথ্য আবিষ্কার করছে। অতএব, ধর্মীয় বর্ণনা বিজ্ঞানকে প্রভাবিত করে বা প্রতিকূল নয়।
🛡️ আসমানের সুরক্ষা ও সজ্জা: কোরআনে উল্লেখ আছে যে প্রথম আসমানকে প্রদীপমালায় সজ্জিত ও সুরক্ষিত করা হয়েছে। এটি মহাবিশ্বের এক স্তরের নিরাপত্তা ও গঠনগত স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত হতে পারে, যা বিজ্ঞানে এখনো অনুধাবন করা হয়নি।
⏳ দূরত্বের মাপ ও বাস্তবতা: হাদিসে উল্লেখিত ৫০০ বছরের পথের দূরত্ব রহস্যময় এবং কোন একক দ্বারা মাপা হয় তা অজানা। এটি আলোকবর্ষ নাকি অন্য কোন দূরত্বের একক, তা স্পষ্ট নয়। এই দূরত্বের ধারণা বিজ্ঞান ও ধর্মীয় ব্যাখ্যার মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হতে পারে।
🧐 স্তরভিত্তিক মহাকাশ বিন্যাস: তুর্কি মহাকাশ বিজ্ঞানী ড. হালুক নূর এবং মুসলিম দার্শনিকগণ মহাকাশকে সাতটি স্তরে ভাগ করার চেষ্টা করেছেন, যা কোরআনের ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। তবে এই স্তরগুলো কোরআনের সাত আসমানের সাথে সরাসরি মিল আছে কি না, তা নিশ্চিত নয়।
🌌 মানবজ্ঞান ও মহাবিশ্বের সীমা: মহাবিশ্বের অসীমতা ও অজানা রহস্যের কারণে মানুষের জ্ঞান সীমিত। কোরআনও এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে মানুষ যতই চেষ্টা করুক, মহাকাশ সম্পর্কে সমপূর্ণ তথ্য লাভ করা সম্ভব নয়। তাই সাত আসমানের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যুক্তিযুক্ত নয়।
No comments